ইসরায়েলি বাহিনী গাজাগামী সাহায্যবাহী নৌকা ও গ্রেটা থুনবার্গকে আটক করেছে

গাজা উপকূলে মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা একটি দাতব্য সংস্থার নৌকা ইসরায়েলি নৌবাহিনী জব্দ করেছে। ওই নৌকাটিতে ছিলেন সুইডিশ জলবায়ু আন্দোলনকারী গ্রেটা থুনবার্গসহ আরও কয়েকজন আন্তর্জাতিক কর্মী।
ঘটনার বিস্তারিত:
ব্রিটিশ পতাকাবাহী ইয়ট ‘ম্যাডলিন’ পরিচালনা করছিল ‘ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন’, যারা প্রতীকী কিছু মানবিক সাহায্য গাজায় পৌঁছানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিকভাবে গাজা সংকটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এ যাত্রা শুরু করে।
মুসলিম বিশ্ব রিলেটেড নিউজ
গ্রেটা থুনবার্গ যাত্রার আগে একটি ভিডিও বার্তায় বলেন:
"যদি আপনারা এই ভিডিও দেখেন, তাহলে বুঝে নিন আমরা ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর হাতে আন্তর্জাতিক পানিসীমায় আটক ও অপহৃত হয়েছি। আমি আমার বন্ধু, পরিবার এবং সহযোদ্ধাদের প্রতি অনুরোধ করছি—সুইডিশ সরকারকে চাপ দিন যেন আমাদের দ্রুত মুক্ত করা হয়।"
ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিশ্চিত করেছে, নৌকাটি বর্তমানে তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং সব যাত্রী সুস্থ ও নিরাপদ রয়েছেন।
তারা জানায়: "এই সেলিব্রিটিদের 'সেলফি ইয়ট' এখন নিরাপদে ইসরায়েল উপকূলে যাচ্ছে। যাত্রীরা তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত যাবেন।"
একটি ছবিতে দেখা যায়, যাত্রীরা লাইফ জ্যাকেট পরে হাতে তুলে বসে আছেন।
আরেক ছবিতে গ্রেটা থুনবার্গকে কমলা লাইফ ভেস্ট ও সবুজ টুপি পরে দেখা যায়, পাশে একজন সৈন্য তাকে স্যান্ডউইচ দিচ্ছেন।
অন্য যাত্রীরা কারা ছিলেন?
ফরাসি ইউরোপীয় সংসদ সদস্য রিমা হাসান বলেন, "রাত ২টার দিকে আন্তর্জাতিক পানিসীমায় আমাদের ইসরায়েলি সেনারা গ্রেপ্তার করেছে।"
ফ্রান্স ও স্পেন তাদের নাগরিকদের জন্য কনসুলার সহায়তা চেয়েছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ’র দপ্তর জানিয়েছে, তিনি ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছেন যেন ফরাসি নাগরিকদের দ্রুত মুক্তি দেওয়া হয়।
ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া:
ইসরায়েল এই পুরো অভিযানে অংশগ্রহণকারীদের প্রচারমুখী এবং হামাসপন্থী বলে উল্লেখ করেছে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, "এই নৌকা যেন গাজায় না পৌঁছায় তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।"
তিনি জানান, নৌকাটি আশদোদ বন্দরে পৌঁছালে যাত্রীদের ৭ অক্টোবর, ২০২৩ সালের হামাস হামলার দৃশ্য দেখানো হবে।
ইসরায়েল জানায়, "নৌকাটিতে থাকা যে অল্প কিছু সহায়তা রয়েছে, তা ‘সেলিব্রিটিদের’ দ্বারা খাওয়া না হয়ে থাকলে, বাস্তব মানবিক চ্যানেলের মাধ্যমে গাজায় পাঠানো হবে।"
গাজার প্রতিক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক আহ্বান:
হামাস এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে একে "রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ" বলে আখ্যা দিয়েছে এবং ওই কর্মীদের ‘সালাম’ জানিয়েছে।
জাতিসংঘের বিশেষ মানবাধিকার প্রতিনিধি ফ্রানচেস্কা আলবানিজ এই অভিযানকে সমর্থন করে বলেন,
"ম্যাডলিনের যাত্রা হয়তো শেষ, কিন্তু এই মিশন এখনো শেষ হয়নি। প্রতিটি ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর থেকে গাজার উদ্দেশ্যে সহায়তা ও সংহতি পাঠাতে হবে।"
পটভূমি:
২০০৭ সালে হামাস গাজা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই ইসরায়েল উপকূলীয় এই অঞ্চলকে নৌ অবরোধ করে রেখেছে, যাতে অস্ত্র পাচার ঠেকানো যায় বলে তারা দাবি করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলি তথ্যমতে ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হন। তার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৪,০০০-র বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে হামাস-শাসিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দাবি করছে।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন