ইরানে ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা: আইআরজিসি প্রধান ও দুই পরমাণু বিজ্ঞানী নিহত

শুক্রবার ভোরে ইসরায়েল ইরানে একটি বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালিয়েছে। হামলায় লক্ষ্যবস্তু ছিল দেশটির পরমাণু স্থাপনা, সামরিক কমান্ড সেন্টার এবং বিজ্ঞানীরা। ইরানি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড (IRGC)-এর প্রধান হোসেইন সালামি ও দুই পরমাণু বিজ্ঞানী এই হামলায় নিহত হয়েছেন।
তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়ার কুন্ডলি উঠতে দেখা গেছে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক টেলিভিশন ভাষণে জানান,
“আমরা ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রমের হৃদয়ে আঘাত করেছি। ইরানের পরমাণু অস্ত্রায়ন কর্মসূচির প্রধান জায়গাগুলোকেও লক্ষ্য করেছি।”
ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ রিলেটেড নিউজ
তিনি বলেন,
“আমরা নাতাঞ্জে ইরানের মূল পরমাণু স্থাপনায় হামলা করেছি। আমরা তাদের প্রধান বিজ্ঞানীদের টার্গেট করেছি, যারা ইরানি বোমা তৈরির কাজে যুক্ত ছিলেন। একই সঙ্গে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দুতেও আমরা আঘাত হেনেছি।”
ইরানি সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাজধানী তেহরান, নাতাঞ্জসহ বিভিন্ন শহরে ভয়াবহ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। নিহত বিজ্ঞানীরা হলেন:
-
ফেরেইদুন আব্বাসি: ২০১১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান ছিলেন।
-
মোহাম্মদ মেহেদি তেহরানচি: একজন প্রখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিদ।
তাদের নিজ নিজ বাসায় টার্গেট করে হামলা চালানো হয় বলে জানানো হয়েছে।
তেহরানে একটি আবাসিক এলাকায় চালানো হামলায় শিশু নিহত হওয়ার খবরও প্রকাশ করেছে ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। এছাড়া রাজধানীর ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সকল ফ্লাইট সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে এবং বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সর্বোচ্চ সতর্কতায় রয়েছে বলে নওর নিউজ নিশ্চিত করেছে।
হামলার এক ঘণ্টার মধ্যেই ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
“এই অপরাধের মাধ্যমে জায়নবাদী শাসন তাদের জন্য তিক্ত ও বেদনাদায়ক পরিণতির ব্যবস্থা করে ফেলেছে, যা তারা অবশ্যই দেখতে পাবে।”
তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন,
“ইসরায়েল এই অপরাধের জন্য কঠিন শাস্তি পাবে।”
এই হামলার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি সতর্ক করে বলেন,
“আমরা ইরানে হামলার সঙ্গে জড়িত নই। আমাদের একমাত্র অগ্রাধিকার হলো মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান সেনাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা।”
ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদে আগেই সতর্ক করেছিলেন, যদি পারমাণবিক আলোচনায় অগ্রগতি না হয় এবং যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায়, তাহলে ইরান মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাবে।
এদিকে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ক্রিস মারফি মন্তব্য করেন,
“ইসরায়েলের এককভাবে এই হামলা চালানো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির দুর্বলতাকে নির্দেশ করে। এই সিদ্ধান্ত পারমাণবিক আলোচনাকে ধ্বংস করে মধ্যপ্রাচ্যে ভয়াবহ যুদ্ধের আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।”
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন