ঢাকা, সোমবার, জুন ৩০, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রক্ত না রুটি: গাজার মানুষের বেঁচে থাকার নির্মম সংগ্রাম

মুক্তধ্বনি নিউজ ডেস্ক

মুক্তধ্বনি নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩ জুন, ২০২৫, ০১:০১ এএম

রক্ত না রুটি: গাজার মানুষের বেঁচে থাকার নির্মম সংগ্রাম
HTML tutorial

ইসরায়েলের খাদ্যবাহী কনভয়গুলোর ওপর বোমাবর্ষণ ও ত্রাণ প্রবেশ নিষিদ্ধ করে গাজাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে – যেখানে বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে বেছে নিতে হচ্ছে ক্ষুধা, চুরি কিংবা মৃত্যু।


গাজার মানুষের দুর্ভোগ কেবল বোমা হামলার নিহতদের সংখ্যা বা ধ্বংস হওয়া ঘরবাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। তার চেয়েও গভীরভাবে তারা প্রতিদিন সহ্য করছে এক ভয়ঙ্কর মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক নিপীড়ন – যা একটি পরিকল্পিত জায়নবাদী নীতির অংশ, যার উদ্দেশ্যই হলো গাজার মানুষের জীবনকে নরকে পরিণত করা।

আজ গাজায় বেঁচে থাকা মানেই নায়কত্ব। গত একশোরও বেশি দিন ধরে ইসরায়েল গাজার সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির প্রবেশ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছে।

ক্ষুধার রাজনীতি

২ মার্চ ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া এই অবরোধের ফলে খাদ্যের শেষ অবশিষ্টটুকুও ফুরিয়ে গেছে। যে সামান্য কিছু পাওয়া যাচ্ছে, তার দাম ২০-৩০ গুণ বেড়ে গেছে।

একজন বাবা-মা হয়ে সন্তানের ক্ষুধার্ত কান্না উপেক্ষা করা এখন তাদের বাধ্যতামূলক কাজ। অনেক পরিবার দিনে একবার খুব নিম্নমানের খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে।

এমন এক জায়গায় পৌঁছেছে পরিস্থিতি, যেখানে একটি বিস্কুট কিনতেও মানুষ সেটিকে পকেটে লুকিয়ে নিতে বাধ্য হয় – যেন চুরি করছে।

শূন্য বাজার, শূন্য পকেট

বাজারে এখন প্রায় কিছুই নেই। প্রতিদিন মানুষ ৩ কিলোমিটার বা তার বেশি হেঁটে খাওয়ার কিছু খুঁজতে বের হয়। একটি রুটি, কয়েকটি ফালাফেল বল – সেটাই এখন লক্ষ্য।

একটা বিস্কুট, যার দাম এক সময় ১ শেকেল ছিল, এখন ২০ শেকেল পর্যন্ত উঠেছে। ৫ ডলারের ময়দার বস্তা এখন ১,০০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।

এই দুঃসহ অবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরেকটি বড় সমস্যা – নগদ টাকার সংকট। গাজার ব্যাংকগুলো এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ। পুরনো বা সামান্য ছেঁড়া নোট গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

একজন ক্রেতা হয়তো অবিশ্বাস্য দাম দিয়ে কোনো পণ্য কিনতে প্রস্তুত, কিন্তু সেই লেনদেন ভেঙে যায় শুধু টাকার অবস্থা একটু খারাপ বলে।

নতুন ব্যবসা: লুটপাট আর কমিশন

ব্যবসায়ীরা এখন নগদ টাকার বিনিময়ে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত "কমিশন" কেটে নিচ্ছে – যা আগের সর্বোচ্চ ১ শতাংশ থেকে ভয়ানকভাবে বেড়েছে।

কিছু ব্যবসায়ী এই মৃত্যুর বাজারে নিজেদের লাভ বাড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তবে এই সংকটের মূল কারিগর কিন্তু তারা নয় – বরং ইসরায়েলি দখলকারী বাহিনীই গাজাকে নগদহীন করে তোলার পরিকল্পিত নীতির বাস্তবায়ন করেছে।

ত্রাণকেও বানানো হয়েছে লক্ষ্যবস্তু

আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরায়েল দাবি করে কিছু ত্রাণ ট্রাক প্রবেশ করতে দেবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, ট্রাকগুলো ঢুকতে না ঢুকতেই সেগুলোর ওপর বোমা হামলা চালানো হয়, নিরাপত্তা রক্ষীদের হত্যা করা হয় এবং লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়।

এই কৌশল – অনুমতি দিয়ে ত্রাণ পাঠানো, তারপর তা পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা – বহুবার ব্যবহার করেছে ইসরায়েল। এটি একটি সুস্পষ্ট বার্তা: ইসরায়েল চাইছে গাজায় সামাজিক ভাঙন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে।

সমাজের পতন

এখন গাজার মানুষের কাছে বেঁচে থাকার মাত্র দুটি পথ আছে:
১. ১,০০০ ডলার দিয়ে এক বস্তা ময়দা কেনার সামর্থ্য থাকতে হবে,
অথবা
২. একটি সশস্ত্র গ্যাংয়ে যোগ দিয়ে অন্যদের সাথে লুটপাটে নামতে হবে।

ইসরায়েল এখন কেবল গাজার মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাচ্ছে না, বরং তাদের পুরো সমাজ কাঠামোকেই ধ্বংস করে দিতে চায় – যেন মানুষ খাদ্যের জন্য মানবতা বিসর্জন দেয়।


শেষ কথায়:
এই নৃশংসতা, এই পরিকল্পিত দুর্ভিক্ষ আর মানবিক বিপর্যয়ের সামনে বিশ্বের নীরবতা এক ভয়ানক ইতিহাস রচনা করছে। প্রশ্ন একটাই: কতটা নৃশংসতা হলে বিশ্ব বিবেক জাগবে?

মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

Google News Icon গুগল নিউজে দেখুন
HTML tutorial