জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার হারাতে পারেন ট্রাম্প : রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট শুক্রবার এমন একটি রায় দিয়েছে যা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য অনেকটাই বিজয়ের সমান, তবে তিনি যে নীতিমালাটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন—জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব সীমিত করার নির্দেশনা—সে বিষয়ে তিনি এখনও পরাজিত হতে পারেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানুয়ারিতে ক্ষমতায় ফিরে আসার প্রথম দিনেই একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যা জন্মসূত্রে নাগরিকত্বকে সীমিত করে। এই আদেশে বলা হয়, যদি কোনও শিশুর বাবা-মা উভয়েই মার্কিন নাগরিক না হন বা কোনো একজনও ‘গ্রিন কার্ড’ধারী না হন, তাহলে সেই শিশু জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাবে না।
এই আদেশ দ্রুতই তিনজন ফেডারেল বিচারক দ্বারা সাময়িকভাবে সারা দেশে স্থগিত করা হয়। তাদের মতে, এই আদেশটি মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর পরিপন্থী।
বিশ্ব/আন্তর্জাতিক রিলেটেড নিউজ
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বিচারকদের সর্বজনীন (universal) স্থগিতাদেশ জারির ক্ষমতাকে সীমিত করা হয়েছে। তবে এই রায় এমনভাবে দেওয়া হয়েছে যাতে করে এই আদেশের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জকারীরা এখনও নিচের আদালতে আইনি সুরক্ষা চাওয়ার সুযোগ পায়।
বিশেষজ্ঞদের মত:
নটর ডেম ল’ স্কুলের অধ্যাপক স্যামুয়েল ব্রে বলেন, "আমি মনে করি না প্রেসিডেন্টের এই নির্বাহী আদেশ কখনো কার্যকর হবে।"
তিনি জানান, নতুন এই নিয়মকে প্রতিহত করতে এখন দেশজুড়ে ক্লাস অ্যাকশন মামলা (class action lawsuit) দায়েরের ঢল নামবে। এর ফলে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করা সম্ভব হবে।
রায়ের মূল দিক:
-
সুপ্রিম কোর্ট রায়ে বলেছে, বিচারকগণ শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট মামলার বাদীদের পূর্ণ সুরক্ষা দিতে পারবেন।
-
বিচারপতি অ্যামি কনি ব্যারেট, যিনি ট্রাম্প কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত, বলেছেন—বিচারকরা যেন ‘সাম্রাজ্যবাদী’ ভূমিকা না নেন।
-
এই রায় ট্রাম্পের নির্বাহী ক্ষমতা বাস্তবায়নে বড় একটি সহায়ক পদক্ষেপ হতে পারে। যেমন:
-
অভিবাসী প্রত্যাবাসন দ্রুততর করা,
-
ট্রান্সজেন্ডার অধিকার সীমিত করা,
-
বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতিমালাগুলো সংকুচিত করা,
-
ফেডারেল সরকারকে ছোট করা ইত্যাদি।
-
চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
-
ম্যারিল্যান্ড মামলার বাদীরা এখন মামলাটিকে ক্লাস অ্যাকশন হিসেবে গ্রহণ করার জন্য আদালতে আবেদন করেছেন, যাতে দেশব্যাপী সকল সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত শিশুকে সুরক্ষা প্রদান করা যায়।
-
২২টি রাজ্য, যেগুলোর অধিকাংশই ডেমোক্রেটিক, যুক্ত হয়ে ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। তাদের যুক্তি, এটি তাদের প্রশাসনিক ও আর্থিক চাপ বাড়াবে, তাই সারা দেশে আদেশটি স্থগিত করা উচিত।
অমীমাংসিত প্রশ্ন:
-
রাষ্ট্রগুলোর কি সারাদেশে কার্যকর এমন নিষেধাজ্ঞা চাইবার অধিকার আছে?
-
ব্যক্তিগত মামলার তুলনায় ক্লাস অ্যাকশন মামলাগুলো জেতা আরও কঠিন—এখনও নিশ্চিত নয় যে রাষ্ট্রগুলো এই ব্যাপারে আইনি অধিকার রাখে কিনা।
৩০ দিনের সময়সীমা:
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এই রায় কার্যকর হতে এখনও ৩০ দিন বাকি। এই সময়ের মধ্যে চ্যালেঞ্জকারীরা আবারও আইনি সুরক্ষা চাইতে পারবে। যদি তারা ব্যর্থ হয়, তাহলে আদেশটি আংশিকভাবে কিছু রাজ্যে কার্যকর হতে পারে, আর অন্য রাজ্যে না-ও হতে পারে।
কোলম্বিয়া ল’ স্কুলের ইমিগ্রান্টস রাইটস ক্লিনিকের পরিচালক এলোরা মুখার্জি বলেন, “এই রায় কার্যকর হলে, পুরো আমেরিকায় পরিবারগুলো গভীর অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে—তাদের সন্তানেরা আদৌ নাগরিকত্ব পাবে কিনা, তা নিয়ে।”
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন