সাংবাদিকের মানহানি ও ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা: স্বাধীন সাংবাদিকতার ওপর একটি গুরুতর হুমকি

সাংবাদিকতা একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে পরিচিত। এটি সমাজে তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করে এবং দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কিন্তু বর্তমান সময়ের কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র এবং মানহানি চলছে, তা সাংবাদিকতার মৌলিক মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
আমি মোহাম্মদ বশির আহমেদ, দীর্ঘ সময় ধরে সাংবাদিকতার পেশায় নিয়োজিত রয়েছি। গত ৫ই জুন ২০২৫ তারিখে আমি একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে একটি ফোন কল পেয়ে সাইনবোর্ড এলাকায় তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রস্তাব পাই। আমাকে স্থানীয় প্রশাসনিক অভিযান সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য ওই এলাকা যেতে বলা হয়েছিল। সন্ধ্যা আনুমানিক ৭:৩০ মিনিটে অভিযোগকারী সাংবাদিক মো: সালদার দৈনিক মুক্ত খবরের সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা "সাজেদা হাসপাতাল", যা বর্তমানে একটি আবাসিক হোটেল নামে পরিচিত, সেখানে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কিছু ভিডিও ক্লিপ দেখানো হয়।
স্থানীয়রা এটি বন্ধ করতে চাচ্ছিল এবং সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপ কামনা করছিল। আমরা তদন্তের জন্য উক্ত হোটেলের সামনে উপস্থিত হলে, হোটেল কর্তৃপক্ষ ও অভিযোগকারীদের বেপরোয়া আচরণের কারণে আমরা তৎক্ষণাত স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হই। এরপর আমরা সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় উপস্থিত হয়ে বিষয়টির বিস্তারিত জানিয়েছি এবং থানার ওসির সাথে ফোনে যোগাযোগ করি।
আইন-অপরাধ রিলেটেড নিউজ
সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ ও প্রচারের অধিকার রয়েছে, তবে বর্তমানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে যেখানে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ ও ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কিছুদিন আগে একজন নারী সাংবাদিক সচিবালয়ে হেনস্তার শিকার হন এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এটি শুধুমাত্র একটি উদাহরণ, যা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের চিত্র তুলে ধরে।
আইনগত দিক:
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী সাংবাদিকদের মানহানির বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
-
ফৌজদারি দণ্ডবিধি (ধারা ৫০০): মানহানির অভিযোগে মামলা করা।
-
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮: সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা প্রচার ও হুমকি মোকাবেলা।
-
হাইকোর্টে রিট পিটিশন: মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ।
সাংবাদিক ইউনিয়ন, প্রেস ক্লাব, ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর উচিত ভুক্তভোগী সাংবাদিকের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানো এবং সরকারকে সুনির্দিষ্ট তদন্তের জন্য বাধ্য করা।
পরিণতি ও সুপারিশ:
-
সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আইনি সহায়তা প্রদান করা উচিত।
-
মানহানির অভিযোগে দ্রুত তদন্ত ও বিচারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
-
মিডিয়া হাউজ ও সংবাদপত্রকে ভুক্তভোগী সাংবাদিকের পাশে দাঁড়াতে হবে।
-
ষড়যন্ত্রে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
স্বাধীন সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের প্রাণ। সাংবাদিকের মানহানি ও ষড়যন্ত্রমূলক ফাঁসানোর চেষ্টা শুধু একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়, এটি পুরো সাংবাদিক সমাজ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। রাষ্ট্র, সমাজ এবং নাগরিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এর প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন।
মু্ক্তধ্বনি অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন